দেনার দায় থেকে সফল উদ্যোক্তা: রুহুল আমিনের অনুপ্রেরণাদায়ক গল্প
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি শিক্ষা বিভাগের ছাত্র রুহুল আমিন—প্রথম দেখায় হয়তো একজন সাধারণ তরুণ। কিন্তু তাঁর জীবনগল্পে আছে অনুপ্রেরণা, সংগ্রাম এবং প্রযুক্তিনির্ভর সাফল্যের চমৎকার এক দৃষ্টান্ত। একসময় দেনার চাপে জর্জরিত রুহুল, এখন একজন সফল আইটি উদ্যোক্তা। তাঁর প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ১৫ জন কাজ করছেন, এবং তিনি নিজেই আছেন প্রতিষ্ঠাতা ও সিইওর আসনে।
🏠 শুরু মাদ্রাসা থেকে, স্বপ্ন পৌঁছায় প্রযুক্তির জগতে
মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার কাজীশাল গ্রামে জন্ম রুহুল আমিনের। তাঁর পিতা একজন ইমাম, আর মা একজন গৃহিণী। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। শিক্ষাজীবন শুরু করেন মাদ্রাসায়, ইসলামপুর কামিল মাদ্রাসা থেকে ২০১৫ সালে আলিম পরীক্ষায় এ প্লাস পান। এরপর ২০১৬ সালে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, কিন্তু সেখানে পৌঁছাতে গিয়ে পরিবারকে নিতে হয় ঋণ। এই ঋণ শোধ ও সংসারের হাল ধরার তাগিদই তাঁকে এগিয়ে যেতে বাধ্য করে।
💻 প্রযুক্তিতে প্রথম পরিচয়, ফ্রিল্যান্সিংয়ের হাতেখড়ি
প্রযুক্তির জগতে তাঁর প্রথম পা রাখা ২০১৩ সালে, বড় ভাইয়ের হাত ধরে। সেই পরিচয় থেকে ধীরে ধীরে শিখে নেন কম্পিউটার, টাইপিং ও অনলাইন কাজ। প্রথম উপার্জন মাত্র ১ ডলার—ওয়ার্ড ফাইলে কাজ করে। এরপর ফ্রিল্যান্সার ডটকম-এ কাজ শুরু করেন।
ছোট ছোট কাজ থেকে শিখলেন—কাজ জানাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই গ্রাফিক ডিজাইন শেখার চেষ্টা করেন, কিন্তু সৃজনশীলতার ঘাটতি টের পেয়ে পিছু হটেন। তবু থেমে থাকেননি।
🚀 ইউআই/ইউএক্স ডিজাইন থেকে প্রোগ্রামিংয়ের জগতে
একটি ফ্রি আইটি সেমিনারে অংশ নিয়ে রুহুল খুঁজে পান নতুন অনুপ্রেরণা। সেই প্রতিষ্ঠানে বৃত্তি পান, শেখেন ওয়েব ডিজাইন, ব্যানার, পোস্টার তৈরি। এক শিক্ষক তাঁকে পরামর্শ দেন প্রোগ্রামিং শেখার, আর এখান থেকেই শুরু হয় তাঁর প্রযুক্তি ক্যারিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট।
নিজে থেকে ওয়েবসাইট বানানোর চেষ্টা শুরু করেন, পরিচিতদের বলে—”আপনি শুধু ডোমেইন-হোস্টিং কিনুন, ওয়েবসাইট আমি ফ্রি করে দেব।” এভাবে অনেক পোর্টফোলিও তৈরি হয়, যা দেখে ক্লায়েন্টরা আসতে শুরু করে।
💡 প্রথম বড় প্রজেক্ট এবং প্রতিষ্ঠানের ভিত্তি
প্রথম বড় কাজ ছিল একটি ব্লাড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, যেখানে ৪০ হাজার টাকার প্রজেক্টে ৫ হাজার টাকা অগ্রিম পান। কাজ করতে গিয়ে শিক্ষকের সহায়তা নেন এবং সফলভাবে শেষ করেন।
২০১৯ সালে স্নাতক শেষ করার পরও চাকরির পিছনে না ছুটে নিজের স্কিল বাড়াতে থাকেন। একপর্যায়ে বন্ধুরা তাঁকে উৎসাহ দেন নিজের আইটি ফার্ম খোলার জন্য। সেখান থেকেই জন্ম নেয় তাঁর প্রতিষ্ঠান—ইনোভা, যার তিনি প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও।
🏢 ইনোভা: ঘরের টেবিল থেকে আজকের অফিস
বন্ধুদের সহযোগিতায় ছোট্ট একটি ঘর থেকে যাত্রা শুরু করে ইনোভা। ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, ভিডিও প্রোডাকশন, গ্রাফিক ডিজাইন, কনটেন্ট মার্কেটিংসহ নানা সেবাভিত্তিক একটি পূর্ণাঙ্গ আইটি কোম্পানিতে।
বর্তমানে ইনোভায় ১৫ জন কর্মী কাজ করছেন, এবং ভবিষ্যতে কর্মসংস্থান আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে রুহুলের।
🌟 সফলতার গল্প, অনুপ্রেরণার নাম রুহুল আমিন
রুহুল আমিনের গল্প প্রমাণ করে—সঠিক লক্ষ্য, অধ্যবসায় আর শিক্ষার প্রতি নিষ্ঠা থাকলে যেকোনো প্রতিকূলতাকে জয় করা সম্ভব। মাদ্রাসা থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সেখান থেকে একজন সফল আইটি উদ্যোক্তা—রুহুলের পথচলা হাজার তরুণের অনুপ্রেরণা হতে পারে।