ফুডপ্যান্ডার রাইডার থেকে ৩ লাখ টাকার ফ্রিল্যান্সার: আবু সালেহ আহমেদের গল্প
অভাব, হতাশা আর সীমাবদ্ধতার মধ্যেও থেমে যাননি আবু সালেহ আহমেদ। একসময় ছিলেন ফুডপ্যান্ডার একজন ডেলিভারি বয়, আজ তিনি একজন সফল ফ্রিল্যান্সার—মাসিক আয় ৩ লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়, আর কিছু মাসে তা গিয়ে দাঁড়ায় ৫ লাখ টাকায়! শুধু নিজেই নন, তিনি কাজের সুযোগ তৈরি করেছেন আরও চারজন তরুণ-তরুণীর জন্য।
📍 গ্রামের ছেলে থেকে ঢাকার উদ্যোক্তা
আবু সালেহ আহমেদ (ডাকনাম আফনান) কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার তারাপুর গ্রামে বেড়ে উঠেছেন। তাঁর বাবা একজন অবসরপ্রাপ্ত মাদ্রাসা শিক্ষক, মা গৃহিণী। পড়াশোনার শুরু মাদ্রাসায়, পরে ২০২০ সালে লক্ষ্মীপুর সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা শেষ করেন। বর্তমানে তিনি ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিকে স্থাপত্য বিভাগের চতুর্থ বর্ষে পড়ছেন।
🧗 জীবনযুদ্ধের কঠিন দিনগুলো
পড়াশোনার সময় করতেন টিউশনি, মাসে আয় ছিল মাত্র ১৫০০ টাকা।
এই আয়েই চালাতে হতো মেসভাড়া ও খাবার খরচ।
জীবনের সেই সময়টা ছিল বাস্তবেই কঠিন, তবুও স্বপ্ন ছাড়েননি।
🛵 ফুডপ্যান্ডা থেকে শুরু
২০২০ সালে ঢাকায় এসে ফুডপ্যান্ডার রাইডার হিসেবে যোগ দেন সালেহ। রাস্তায় খাবার পৌঁছে দিতেন আর ফাঁকে ফাঁকে শেখার চেষ্টা করতেন আইটি স্কিল। ভর্তি হন ক্রিয়েটিভ আইটি নামের একটি আইটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। কিন্তু ঠিক তখনই হানা দেয় করোনাভাইরাস, ফিরে যেতে হয় গ্রামের বাড়ি।
💻 ফ্রিল্যান্সিং শুরু, কিন্তু বাধা ছিল ল্যাপটপ
পুরোনো একটি ল্যাপটপে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন, কিন্তু প্রথম কাজটিই সফলভাবে শেষ করতে পারেননি ল্যাপটপের সীমাবদ্ধতায়। হতাশ হয়ে বন্ধুর সাহায্য নেন—তাঁর কম্পিউটার ব্যবহার করে শেয়ার ভিত্তিতে কাজ শুরু করেন।
আপওয়ার্ক ও ফাইভআরে কাজ পাওয়া শুরু হয়।
বন্ধুদের কম্পিউটারে বসেই করেন ২ হাজার ডলারের কাজ।
🚀 সফলতার উড়াল
পরে ক্রিয়েটিভ আইটিতে ইন্টার্নশিপ এবং চাকরির সুযোগ পান। ধীরে ধীরে আয় বাড়তে থাকে। এরপর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিতে কাজ করে নিজের জন্য একটি কম্পিউটার কিনে ফেলেন। তখনই শুরু হয় পূর্ণদমে নিজস্ব ক্যারিয়ার গড়ার পথচলা।
🏗️ আর্কিটেকচারাল ডিজাইনের ফ্রিল্যান্সার
বর্তমানে আবু সালেহ:
থ্রি–ডি ভিজ্যুয়ালাইজেশন ও আর্কিটেকচারাল ডিজাইন নিয়ে কাজ করেন
করেছেন ৫০০টিরও বেশি প্রজেক্ট
মার্কেটপ্লেস থেকে আয় করেছেন ১ লাখ ডলারের বেশি (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১.৩ কোটি টাকা)
কাজ করেন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে সরাসরি চুক্তিতে
👨👩👧👦 দল গঠন ও কর্মসংস্থান
তিনি ঢাকার কাঁঠালবাগানে একটি ছোট অফিস চালান, যেখানে তাঁর সঙ্গে চারজন তরুণ/তরুণী কাজ করছেন। সবাইই ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করছেন এবং নিজের খরচ নিজেই চালাচ্ছেন। সালেহ নিজে এখন একজন উদাহরণ—যিনি নিজে গড়ে উঠেছেন, আবার অন্যদেরও সুযোগ করে দিচ্ছেন।
