ফুটবল

ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ: আপনার যা জানা দরকার

football-bdamargoal

ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ: আপনার যা জানা দরকার
ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ, যা ২০০০ সাল থেকে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে, এবার এক নতুন রূপে আসছে! সাধারণত জাতীয় দলের বিশ্বকাপ জুন-জুলাই মাসে হলেও, এই জুন-জুলাইয়ে ক্লাবগুলোকে নিয়ে আয়োজিত এই টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ফিফা এই টুর্নামেন্টকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে এসেছে, যা এটিকে ফুটবলের এক বৈশ্বিক উৎসবে পরিণত করবে।

নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ: বাংলাদেশের ম্যাচের সময়সূচী ও ভেন্যু

ক্লাব বিশ্বকাপ কি নতুন কিছু?
না, ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ নতুন কোনো টুর্নামেন্ট নয়। ২০০০ সাল থেকেই এটি অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। আগে এটিতে ৬ বা ৭টি দল অংশগ্রহণ করত এবং বছরের শেষ দিকে ১০ দিনের মধ্যে অল্প কিছু ম্যাচের মাধ্যমে শেষ হয়ে যেত। কিন্তু এবার, ফিফা এই টুর্নামেন্টের কলেবর বাড়িয়ে একে বৈশ্বিক রূপ দিয়েছে। জাতীয় দলগুলোর বিশ্বকাপের মতোই এবার ৩২টি দল অংশ নিচ্ছে, যা এটিকে আরও প্রতিযোগিতামূলক ও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

ফরম্যাট কি জাতীয় দলের বিশ্বকাপের মতোই?
হ্যাঁ, ফরম্যাটটি জাতীয় দলগুলোর ফিফা বিশ্বকাপের মতোই। ৩২টি দলকে মোট ৮টি গ্রুপে ভাগ করা হয়েছে। প্রতিটি গ্রুপের সেরা দুটি দল শেষ ষোলোতে উঠবে, এবং সেখান থেকে নকআউট পর্ব শুরু হবে। এক মাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ১১টি শহরে মোট ৬৩টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।

ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ: আপনার যা জানা দরকার
ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ: আপনার যা জানা দরকার

৩২টি দল কীভাবে চূড়ান্ত হলো?
দলগুলো বিভিন্ন পদ্ধতিতে চূড়ান্ত হয়েছে। মূলত, গত চার বছরের মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়ন দলগুলোকেই সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

ইউরোপ (উয়েফা): সর্বোচ্চ ১২টি দল।
দক্ষিণ আমেরিকা (কনমেবল): ৬টি দল।
এশিয়া (এএফসি), আফ্রিকা (সিএএফ), উত্তর, মধ্য ও ক্যারিবিয়ান (কনকাকাফ): ৪টি করে দল।
ওশেনিয়া (ওএফসি): ১টি দল।
আয়োজক দেশ (যুক্তরাষ্ট্র): ১টি দল (ইন্টার মায়ামি)।
কিছু ক্ষেত্রে, একই মালিকানার দুটি ক্লাবকে টুর্নামেন্টে খেলার অনুমতি দেওয়া হয়নি, যার ফলে প্লে-অফের মাধ্যমে দল চূড়ান্ত হয়েছে।

দলগুলো কারা?
এখানে মহাদেশ অনুযায়ী অংশগ্রহণকারী দলগুলোর তালিকা দেওয়া হলো:

এশিয়া অঞ্চল (এএফসি): আল-হিলাল ক্লাব (সৌদি আরব), উরাওয়া-রেড-ডায়মন্ডস (জাপান), আল আইন (সংযুক্ত আরব আমিরাত), উলসান (দক্ষিণ কোরিয়া)।
আফ্রিকা অঞ্চল (সিএএফ): আল-আহলি (মিসর), ওয়াইদাদ (মরক্কো), এসপেরানস দি তিউনিস (তিউনিসিয়া), মামেলোদি সানডাউনস (দক্ষিণ আফ্রিকা)।
উত্তর, মধ্য ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চল (কনকাকাফ): মনটেরি (মেক্সিকো), সিয়াটল সাউন্ডার্স (যুক্তরাষ্ট্র), পাচুয়া (মেক্সিকো), লস অ্যাঞ্জেলেস এফসি (যুক্তরাষ্ট্র)।
দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চল (কনমেবল): পালমেইরাস (ব্রাজিল), ফ্ল্যামেঙ্গো (ব্রাজিল), ফ্লুমিনেজ (ব্রাজিল), বোতাফোগো (ব্রাজিল), রিভার প্লেট (আর্জেন্টিনা), বোকা জুনিয়র্স (আর্জেন্টিনা)।
ইউরোপ অঞ্চল (উয়েফা): চেলসি (ইংল্যান্ড), রিয়াল মাদ্রিদ (স্পেন), ম্যানচেস্টার সিটি (ইংল্যান্ড), বায়ার্ন মিউনিখ (জার্মানি), পিএসজি (ফ্রান্স), ইন্টার মিলান (ইতালি), পোর্তোর (পর্তুগাল), বেনফিকা (পর্তুগাল), বরুসিয়া ডর্টমুন্ড (জার্মানি), জুভেন্টাস (ইতালি), আতলেতিকো মাদ্রিদ (স্পেন), রেড বুল সালজবুর্গ (অস্ট্রিয়া)।
ওশেনিয়া (ওএফসি): অকল্যান্ড সিটি (নিউজিল্যান্ড)।
আয়োজক দেশের দল: ইন্টার মায়ামি (যুক্তরাষ্ট্র)।
কোন দেশের ফুটবলার বেশি?
এই টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি ১৪২ জন ফুটবলার ব্রাজিলের। এরপরেই আছে আর্জেন্টিনা, যাদের ১০০ জন ফুটবলার বিভিন্ন ক্লাবে খেলবেন। স্পেন, পর্তুগাল, আমেরিকা, মেক্সিকো, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, মরক্কো এবং দক্ষিণ আফ্রিকার ফুটবলাররাও উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় রয়েছেন।

প্রাইজমানি কত?
এবারের ক্লাব বিশ্বকাপের মোট প্রাইজমানি ১০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের (৪৪ কোটি ডলার) প্রাইজমানির দ্বিগুণেরও বেশি! শুধুমাত্র অংশগ্রহণের জন্যই দলগুলো বড় অঙ্কের অর্থ পাবে। উদাহরণস্বরূপ:

ওশেনিয়ার দল অকল্যান্ড সিটি পাবে ৩৫.৮০ লাখ মার্কিন ডলার।
আফ্রিকা, এশিয়া ও উত্তর আমেরিকার ক্লাবগুলো পাবে ৯৫.৫০ লাখ ডলার করে।
দক্ষিণ আমেরিকার দলগুলোর জন্য বরাদ্দ ১ কোটি ৫২.১০ লাখ ডলার।
ইউরোপের দলগুলো তাদের ক্রীড়া ও বাণিজ্যিক মানদণ্ড অনুসারে ১ কোটি ২৮.১০ লাখ থেকে ৩ কোটি ৮১.৯০ লাখ ডলারের মধ্যে পাবে।
এছাড়াও, প্রতিটি জয়-হার এবং নকআউট পর্বের অগ্রগতির ভিত্তিতে পুরস্কারের অর্থ বাড়বে। চ্যাম্পিয়ন দল পাবে ৪ কোটি ডলার। এই অর্থ সরাসরি ক্লাবের অ্যাকাউন্টে যাবে, খেলোয়াড়েরা এর কতটুকু পাবেন তা ক্লাবই সিদ্ধান্ত নেবে।

খেলা হবে কোথায়?
টুর্নামেন্টের ম্যাচগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ১২টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে। ক্যালিফোর্নিয়ার রোজ বোল, যেখানে ৮৮,৫০০ আসন রয়েছে, সেটিই সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম। নিউজার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়ামে ৮২,৫০০ দর্শক খেলা দেখতে পারবেন এবং ফাইনাল ম্যাচ এখানেই অনুষ্ঠিত হবে। ২০২৬ ফিফা বিশ্বকাপের ফাইনালও এই মাঠেই হওয়ার কথা।

নতুন কী আছে?
এবারের ক্লাব বিশ্বকাপে কিছু নতুন নিয়ম ও প্রযুক্তি দেখা যাবে:

রেফারিদের বডি ক্যামেরা: রেফারিদের শরীরে বডি ক্যামেরা থাকবে, যার ফুটেজ টিভি সম্প্রচারে ব্যবহার করা হবে। এটি গোলের বা সেভের ভিন্ন অ্যাঙ্গেল দেখানোর পাশাপাশি ম্যাচের শুরুর কয়েন টসের লাইভ ভিডিও ও শব্দও সম্প্রচার করতে পারবে। তবে পেনাল্টি বা বিতর্কিত মুহূর্তগুলো এই অ্যাঙ্গেল থেকে দেখানো হবে না।
গোলকিপারদের জন্য ৮ সেকেন্ডের নিয়ম: গোলকিপারকে বল কুড়িয়ে নেওয়ার পর আট সেকেন্ডের মধ্যে ছেড়ে দিতে হবে। যদি তিনি তা না করেন, তবে প্রতিপক্ষ তখন কর্নার কিক পাবে।

যে তারকাদের দেখা যাবে না:
দলগুলো যোগ্যতা অর্জন না করায় এবারের ক্লাব বিশ্বকাপে কিছু বড় তারকাকে দেখা যাবে না। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন: লামিনে ইয়ামাল (বার্সেলোনা), মোহাম্মদ সালাহ (লিভারপুল), নেইমার (সান্তোস), ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো (আল নাসর) এবং বুকায়ো সাকা (আর্সেনাল)।

ফেভারিট কোন দল?
সব সময়ের মতোই ইউরোপের ক্লাবগুলোই এই টুর্নামেন্টের ফেভারিট। ক্লাব বিশ্বকাপের গত ২০ আসরের মধ্যে ১৬টিই ইউরোপের ক্লাব জিতেছে, এমনকি সর্বশেষ টানা ১১টি শিরোপাও ইউরোপীয় দলগুলোর দখলে। তবে দক্ষিণ আমেরিকার দলগুলোও প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি করতে পারে। ব্রাজিলের বোতাফোগো, রিয়াল মাদ্রিদ, পিএসজি এবং বায়ার্ন মিউনিখের মতো দলগুলো শিরোপার অন্যতম দাবিদার।

সমালোচনা কেন?
এই ক্লাব বিশ্বকাপ নিয়ে মূল আলোচনা-সমালোচনা খেলোয়াড়দের পক্ষ থেকে আসছে। ফুটবলারদের বৈশ্বিক সংগঠন ফিফপ্রো ফিফার এই আয়োজনকে সঠিক মনে করছে না অনেকেই। খেলোয়াড়দের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়তে পারে বলে অভিযোগ উঠেছে। গ্রীষ্মের বিরতির সময় ইউরো, কোপা আমেরিকা এবং এখন ক্লাব বিশ্বকাপ – এই ধারাবাহিক টুর্নামেন্টগুলো দীর্ঘমেয়াদে খেলোয়াড়দের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

শুরু ও শেষ কবে?
ক্লাব বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচ ১৪ জুন (বাংলাদেশ সময় ১৫ জুন সকালে) অনুষ্ঠিত হবে। এই ম্যাচে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টার মায়ামি এবং মিসরের আল আহলি মুখোমুখি হবে। টুর্নামেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে ১৩ জুলাই।

Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

জনপ্রিয় ফিচার

To Top